আতপুরঃ সব চরিত্র কাল্পনিক।
কথা রাখা।
ভোর হতে আর বেশি নেই। মিনারের ঘড়িতে তিনটের ঘন্টা শোনা যায়। শাঁই শাঁই করে গাড়ি গুলো আপন আলো নিয়ে দূরে হারায়।
ফুরোয় না কপোত কপোতীর কথা।
বাতাস শোনে, যখন প্রথম ধরেছে কলি আমার...
বসুধা, গুনগুন করে।
'তোর জন্যই তো বললাম। আর তুই আমায় মাল্লি।’ ময়েশ্চারাইজার মাখতে মাখতে, বসুধা, আঁড় চোখে জিজ্ঞাসু তাকায়!
’মেরেছি, বেশ করেছি। আর একটা কথা বলবি তো, দোবো দুই ঘা।’ বলে, সুবীর, হেডফোন গুঁজে প্যাকিং সারতে থাকে।
ত'বেরে। ঘষামাজা বসুধা, সুবীরের কলার দুটো চেপে আঁকড়ে ধরে, মুচকি হাসে। অতীব আস্তে বুঝি বা বাতাস হয়ত শুনতে পায় না।
"এই ভোররাতে এরম সোহাগ কি, না দেখালেই নয়। ৯ টা’ য় ব্রেকফাস্ট, খেয়াল আছে? সুহাসিনী?'
সুবীরঃ 'ঠিক আছে। ছাড়। তুই যে এভাবে বলতে পারিস, আগে বুঝিনি।
ওসব আলুথালু শাড়ি আর পরিস না। বড্ড আইঠাঁই লাগে রে।'
'ও আচ্ছা। ঠিক আছে?' বলে গুম মেরে বালিশ চেপে শুয়ে পড়ে। বসুধার চোখ জুড়ে আসে।
সাজানো গোছানো পরিপাটি এ আলো আঁধার।
সে তাপমাত্রায় চলে ডিসিপ্লিনের খেলা।
পার্ক স্ট্রিট টা বড়ই অদ্ভূত।
আসলে অল্প অল্প করে সব স্থানই কত রকমারি গল্প বোনে।
মিস্টার সারাওগির ম্যানশন, তৃতীয় তল।
বসুধাও রাতের ঝিমিয়ে থাকা আলোয়, ছাদে তাকিয়ে থেকে কোথায় যেন হারিয়ে যায়।
হাজি তে মিটিং শেষ। সামনেই ক্রিসমাসের বিশাল একটা ব্যাবসা অপেক্ষারত। যত টা পারা যায় পুশসেল করে দিলে বসুধা কে, আর আটকায় কে?
এই মাল্টিপারপাস কাজ টা ও বেশ উপভোগ করে।
মিস্টার সারাওগির মেয়ে, সুহাসিনীর সঙ্গে বসুধার খুব খাতির।
দু'জনার এক সাথেই পড়াশোনা। ওনার বাবাও বসুধা কে খুব স্নেহ করেন।
বসুধা, চিতলেবন্ধু মিঠাইওয়ালে তে নিউট্রিশন অ্যাডভাইসার।
সুবীর ও ওই কোম্পানীরই নব নিযুক্ত সি.এ। আগামীকাল ওরা আতপুরে আসছে। আশীর্বাদ নিতে। তারপর বিকেলের ফ্লাইটে উড়ে যাবে মুম্বাই।
সুবীরের বাবা,
প্রবীর রাজবংশী ছাইগাদায় ভাড়া থাকে। আগে বি.আর.এস কলোনী তেই থাকতো। ওখানেই কারা যেন, মা আর ওকে পাঁজা কোলা করে এনে ফেলেছিল। চারিদিকে কত খোলা জলাজমি। পুকুর, কত সবুজ গাছ। এত পেঁপে, আম, নারকোল গাছ আগে সে দেখেনি। প্রবীরের খুব ভালো লেগেছিল।
ওরা চালা দিয়েছিল, ইটখোলায় কাজ ও দিল। অজিত কাকু মাকে খুব স্নেহ করতো। মা প্রায়ই বলতো ওই মানুষ টা না থাকলে, ত'রে আর ফি..বলতে বলতে গলা বুঝিবা ধরে এল।
লোক টা যেন হারিয়েই গেল? কিন্তু মায়ের মুখে শোনা সেই 'রাত' ও কিছু তেই ভুলতে পারে না।
প্রতিদিন দুটো একটা করে লরি আসতই।
এখনো, ধোঁয়া ওঠা সেই ভাত। চিলতে দাওয়ায় বসে মা। ভাবলেই চোখ ছলছল করে আসে। এখন মা টাকেও ঠিক ঠাক মনে পড়ে না।
বি আর এস থাকাকালীন, প্রবীর গাঁজা খেত।
এখন চুল্লু খায়। মাঝের ১৫ টা বছর, ডন বৈঠক করে টোরে সেকি শরীর। মা বলতো, এ যে দিন দিন ভাল্লুক হয়ে যাবি লা। ও হাসে। সারাটা শরীর লোমে ভরা। রোদ পড়লেই পেশির ভাঁজ গুলো দিকে তাকানো যায় না।
ভাটপাড়ায় ব্যায়াম সমিতি আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ খাতিরও পেয়েছিল।
ওখানেই তো সুজন না কেন যেন, বলেছিল, জানিশ তোর বাপ টারে কাইট্টা টুকরা কইরা পদ্মায় ভাসায় দিসে। ও ছিলিম টাতে জোরে টান দ্যায়। পারে না।
চুলে পাক ধরছে তো। এখন আতপুরেই, সন্ধে গড়ালেই, এই গঙ্গার ঘাটে চুপটি করে বসে থাকে। হাঁ করে তাকিয়ে থাকে ওপারে। ভোলা কাঁধে হাত রাখে। ওর সম্বিত ফেরে।
'দে।'
ভোলা প্লাস্টিকের একটা পানীয় ধরিয়ে দেয়।
প্রবীরঃ জানিশ ভোলা, "আমি কিন্তু মুসলীমের পোলা।"
ভোলাঃ "আর কতবার বলবি বলতো?
প্রবীর চোখ টাকে বড় বড় করে এদিনের সুর্য টাকে শেষ দেখে নিতে চায়। কুয়াশায় ভরা দিগন্তে খানেক জলের শব্দ আর চিমনির ধোঁয়া।
হ্যাঁ রে সিধু বলছিল, কাল নাকি পৌরসভা থেকে একটা মায়না দেবে!
ভোলাঃ মায়না না ছাই। ওসব নাটক কত দেখলাম। এনে, কলি ওঠা ছোলা সেদ্দ। লেবু দিয়ে মেখে এনেছি।"
প্রবীরঃ "হ্যাঁ রে ছোঁড়া টা, আমারে দেখতে আসে না কেন রে?"
ভোলা হাসে। ওর মেয়ে টাও যে, কোথায় যেন হারিয়ে গেল। আজকেই তো আসবে বলে কথা দিয়েছিল।
কথা রাখা।
ভোর হতে আর বেশি নেই। মিনারের ঘড়িতে তিনটের ঘন্টা শোনা যায়। শাঁই শাঁই করে গাড়ি গুলো আপন আলো নিয়ে দূরে হারায়।
ফুরোয় না কপোত কপোতীর কথা।
বাতাস শোনে, যখন প্রথম ধরেছে কলি আমার...
বসুধা, গুনগুন করে।
'তোর জন্যই তো বললাম। আর তুই আমায় মাল্লি।’ ময়েশ্চারাইজার মাখতে মাখতে, বসুধা, আঁড় চোখে জিজ্ঞাসু তাকায়!
’মেরেছি, বেশ করেছি। আর একটা কথা বলবি তো, দোবো দুই ঘা।’ বলে, সুবীর, হেডফোন গুঁজে প্যাকিং সারতে থাকে।
ত'বেরে। ঘষামাজা বসুধা, সুবীরের কলার দুটো চেপে আঁকড়ে ধরে, মুচকি হাসে। অতীব আস্তে বুঝি বা বাতাস হয়ত শুনতে পায় না।
"এই ভোররাতে এরম সোহাগ কি, না দেখালেই নয়। ৯ টা’ য় ব্রেকফাস্ট, খেয়াল আছে? সুহাসিনী?'
সুবীরঃ 'ঠিক আছে। ছাড়। তুই যে এভাবে বলতে পারিস, আগে বুঝিনি।
ওসব আলুথালু শাড়ি আর পরিস না। বড্ড আইঠাঁই লাগে রে।'
'ও আচ্ছা। ঠিক আছে?' বলে গুম মেরে বালিশ চেপে শুয়ে পড়ে। বসুধার চোখ জুড়ে আসে।
সাজানো গোছানো পরিপাটি এ আলো আঁধার।
সে তাপমাত্রায় চলে ডিসিপ্লিনের খেলা।
পার্ক স্ট্রিট টা বড়ই অদ্ভূত।
আসলে অল্প অল্প করে সব স্থানই কত রকমারি গল্প বোনে।
মিস্টার সারাওগির ম্যানশন, তৃতীয় তল।
বসুধাও রাতের ঝিমিয়ে থাকা আলোয়, ছাদে তাকিয়ে থেকে কোথায় যেন হারিয়ে যায়।
হাজি তে মিটিং শেষ। সামনেই ক্রিসমাসের বিশাল একটা ব্যাবসা অপেক্ষারত। যত টা পারা যায় পুশসেল করে দিলে বসুধা কে, আর আটকায় কে?
এই মাল্টিপারপাস কাজ টা ও বেশ উপভোগ করে।
মিস্টার সারাওগির মেয়ে, সুহাসিনীর সঙ্গে বসুধার খুব খাতির।
দু'জনার এক সাথেই পড়াশোনা। ওনার বাবাও বসুধা কে খুব স্নেহ করেন।
বসুধা, চিতলেবন্ধু মিঠাইওয়ালে তে নিউট্রিশন অ্যাডভাইসার।
সুবীর ও ওই কোম্পানীরই নব নিযুক্ত সি.এ। আগামীকাল ওরা আতপুরে আসছে। আশীর্বাদ নিতে। তারপর বিকেলের ফ্লাইটে উড়ে যাবে মুম্বাই।
সুবীরের বাবা,
প্রবীর রাজবংশী ছাইগাদায় ভাড়া থাকে। আগে বি.আর.এস কলোনী তেই থাকতো। ওখানেই কারা যেন, মা আর ওকে পাঁজা কোলা করে এনে ফেলেছিল। চারিদিকে কত খোলা জলাজমি। পুকুর, কত সবুজ গাছ। এত পেঁপে, আম, নারকোল গাছ আগে সে দেখেনি। প্রবীরের খুব ভালো লেগেছিল।
ওরা চালা দিয়েছিল, ইটখোলায় কাজ ও দিল। অজিত কাকু মাকে খুব স্নেহ করতো। মা প্রায়ই বলতো ওই মানুষ টা না থাকলে, ত'রে আর ফি..বলতে বলতে গলা বুঝিবা ধরে এল।
লোক টা যেন হারিয়েই গেল? কিন্তু মায়ের মুখে শোনা সেই 'রাত' ও কিছু তেই ভুলতে পারে না।
প্রতিদিন দুটো একটা করে লরি আসতই।
এখনো, ধোঁয়া ওঠা সেই ভাত। চিলতে দাওয়ায় বসে মা। ভাবলেই চোখ ছলছল করে আসে। এখন মা টাকেও ঠিক ঠাক মনে পড়ে না।
বি আর এস থাকাকালীন, প্রবীর গাঁজা খেত।
এখন চুল্লু খায়। মাঝের ১৫ টা বছর, ডন বৈঠক করে টোরে সেকি শরীর। মা বলতো, এ যে দিন দিন ভাল্লুক হয়ে যাবি লা। ও হাসে। সারাটা শরীর লোমে ভরা। রোদ পড়লেই পেশির ভাঁজ গুলো দিকে তাকানো যায় না।
ভাটপাড়ায় ব্যায়াম সমিতি আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ খাতিরও পেয়েছিল।
ওখানেই তো সুজন না কেন যেন, বলেছিল, জানিশ তোর বাপ টারে কাইট্টা টুকরা কইরা পদ্মায় ভাসায় দিসে। ও ছিলিম টাতে জোরে টান দ্যায়। পারে না।
চুলে পাক ধরছে তো। এখন আতপুরেই, সন্ধে গড়ালেই, এই গঙ্গার ঘাটে চুপটি করে বসে থাকে। হাঁ করে তাকিয়ে থাকে ওপারে। ভোলা কাঁধে হাত রাখে। ওর সম্বিত ফেরে।
'দে।'
ভোলা প্লাস্টিকের একটা পানীয় ধরিয়ে দেয়।
প্রবীরঃ জানিশ ভোলা, "আমি কিন্তু মুসলীমের পোলা।"
ভোলাঃ "আর কতবার বলবি বলতো?
প্রবীর চোখ টাকে বড় বড় করে এদিনের সুর্য টাকে শেষ দেখে নিতে চায়। কুয়াশায় ভরা দিগন্তে খানেক জলের শব্দ আর চিমনির ধোঁয়া।
হ্যাঁ রে সিধু বলছিল, কাল নাকি পৌরসভা থেকে একটা মায়না দেবে!
ভোলাঃ মায়না না ছাই। ওসব নাটক কত দেখলাম। এনে, কলি ওঠা ছোলা সেদ্দ। লেবু দিয়ে মেখে এনেছি।"
প্রবীরঃ "হ্যাঁ রে ছোঁড়া টা, আমারে দেখতে আসে না কেন রে?"
ভোলা হাসে। ওর মেয়ে টাও যে, কোথায় যেন হারিয়ে গেল। আজকেই তো আসবে বলে কথা দিয়েছিল।