লোকে বলে সাদা মনে কাদা নেই। কিন্তু জমিতে তো কাদা থাকতেই পারে। এই ধরো না ঘোষেদের জমি। ওই যে তরফদার পাড়ার শেষে দুই কারখানার মাঝে হাই ড্রেন। তারপাশেই সরু রাস্তা, এঁকে বেঁকে সুন্দিয়া চলে গেছে। ড্রেন দিয়ে দুর্গন্ধ বেরোত, তাই নাম পচাগলি।
গলির আগেই ডানপাশে বিশাল পুকুর, তবে গলা জল। মাছ চাষ ভালোই হয়। তার ও পাশে ঘোষেদের জমি। মাঠ বলাই ভালো। ওখানের কাদা মাঠে তিন বেলাই খেলা হয়। সামনেই সাথির মাঠ। তল্লাটে কেউ চেনেনা এমন নেই। ক্রিকেট, ফুটবল দুটোই জমে ক্ষীর। জমি টা একটু নিচু আর ভিজে ভিজে। তা ওতে খেলা আটকায় না। মফস্বল সাইটে ওত দেখলে আনন্দ টাই মাটি।
সন্ধের গাঢ়ো হলে পর মাঠে আবছা কিছু জটলা হয়।
নরেন খুড়ো বলছিল, ওরা নাকি দূর জেলার হাইওয়েতে ডাকাতি ফাকাতি করে এসে, পরামর্শ, ভাগ বাটোয়ারা এসব নাকি করে। তা ব্যাপার যাই হোক না কেন, ভদ্রলোকেরা রাত্রি হলে পর ও পথ মাড়ায় না। গোপাল মালোর শালা কে সেবার দুর্গাপূজায় দশমীর রাতে কুপিয়ে দিল। মাঠের ঘাস রক্তে কাদায় মাখামাখি। নরেন খুড়ো তখন যুবক। তার মা এসেছিল নারকেল কুড়োতে।
জমির পাশেই তাদের ছোট্ট একচালা ঘর। সংগে গোটা চারেক নারকেল, সুপারি, বেল আর কিছু ফুল গাছ আছে। এখানে প্রায় ঘরে ঘরেই মানুষের গাছ লাগানোর অভ্যাস আজো অমলীন। ছাদে উঠে যখন হাইরাইস বিল্ডিংের বদলে সবুজ দেখি, মনটা আপনা হতে শান্ত হয়ে আসে। মনে হয় কই কিছুই তো বদলায় নি। এলাকার মানুষ যে প্রকৃতির নিয়মেই অজান্তে প্রকৃতি রক্ষা করে চলেছে।
ধপ করে কিছু পড়ার শব্দ। সঙ্গে গোঙ্গানির শব্দ পেয়ে নরেন খুড়োর মা, বেরিয়ে এসে দেখে, ছায়া মত গোটা কয়েক লোক পচাগলি পেরিয়ে যাচ্ছে। ঘরে এসে নরেন কে ডেকে বলতে ওই বন্ধুবান্ধব দের খবর দেয়।
এভাবেই দিন যায়, বছর যায়, সামনেই কুন্ডু বাড়ির দুর্গা এখন আর তেমন ধুম ধাম করে হয় না। অবস্থা কিছুটা অন্যরকম। বাহান্নো পরিবারে যা হয় আর কি। আর বর্তমানে বড় পরিবার চালানো মানে, রাবণের চিতায় কাঠ জুগিয়ে যাওয়া। চলবে।. . . .
#Athpur ##আতপুর #পচাগলি #সাথিরমাঠ
No comments:
Post a Comment